গোপালগঞ্জে পানির ওপর ডালি স্থাপন করে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষাবাদ
বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় :
১৯-০৯-২০২৩ ০৭:৪১:৩৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৯-০৯-২০২৩ ০৭:৪৩:১৭ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি :
গোপালগঞ্জে অনাবাদি পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে সমন্বিত কৃষির আওতায় ডালি পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে সাড়া ফেলেছে কৃষি বিভাগ। পতিত ও জলাবদ্ধ বিলের জমি পরিষ্কার করে পানির ওপর ডালি স্থাপন করে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের উদ্ভাবিত নতুন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার কৃষকেরা। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্প্রসারিত হলে সারা বছর পানিতে ডুবে থাকা অনাবাদি জমিও আবাদি জমিতে রূপান্তরিত হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
বিলের পানিতে বাঁশের খুঁটির ওপর ঝুলে আছে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো ডালি। আর তার ওপরে নেটে ঝুলছে নানা ধরনের সবজি। বাঁশ, নাইলনের শক্ত নেট ও ছিদ্রযুক্ত পলিথিন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো হয়েছে এসব ডালি। ভার্মি কম্পোজ মাটি আর জৈব সার ভর্তি করে ডালিতে রোপণ করা হয়েছে লাউ, কুমড়া, শশা, ধুন্দুল ও চিচিংগা। দুই মাস আগে রোপণ করা গাছে এখন ঝুলছে নানা ধরনের সবজি। বাঁশের তৈরি বানা দিয়ে ঘিরে করা হচ্ছে মাছ চাষও। এছাড়া রাস্তার খাদে গোড়া পদ্ধতিতে ও ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মশলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ছোট-বড় বেশ কয়েকটি বিল রযেছে। বছরের অধিকাংশ সময় এই সব বিলের আংশিক জমি পানিতে ডুবে থাকা আর শুকনো মৌসুমেও কোমর পানি বা হাঁটু পানিতে থাকায় সেখানে কোনো ফসল উৎপাদন হতো না। ফলে প্রায় ৫০ বছর ধরে এসব জমি অনাবাদি পড়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার অতিমাত্রার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দেশের কৃষি ও কৃষি বিভাগকে পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। গোপালগঞ্জে সাড়া ফেলেছে ডালি পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার উন্নয়ন প্রতিনিধি শহীদ উল্লা খন্দকার ও কৃষি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বালাডাঙ্গা গ্রামের পুবের বিলে প্রধামন্ত্রীর পৈত্রিক পতিত জমিকে আবাদি জমিতে রূপ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জোয়ারিয়া গ্রামের প্রসেনজিৎ দাস বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ শিখেছি। এ পদ্দতিতে সবজি চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এক খরচে ২ মৌসুম ভালো ফলন হয়। আগামী বর্ষা মৌসুমে আমি আমার জলাবদ্ধ জমিতে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করব। একই উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের তপন বিশ্বাস বলেন, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ও কিট নাশক লাগে না। একবার বাঁশ কিনে ডালি লাগিয়ে শুরু করলে দুই বছর পর্যন্ত আবাদ করা সম্ভব।\
এতে খরচ কম হয়। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতে আমরা যখন এই পদ্ধতিতে চাষ শুরু করি তখন এলাকার মানুষ আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করেছে। এখন আমরা বিভিন্ন জাতের সবজি ফলিয়ে সফল হয়েছি। আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে এই চাষ শুরু করব। গোপালগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল কাদের সরদার বরেন, ডালি পদ্ধতিতে চাষ গোপালগঞ্জে মডেল হিসেবে শুরু করা হয়েছে। শুরুতেই আমরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়েছি। এই পদ্ধতিতে চাষ দেখে কৃষকদের মধ্যে ব্যপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতে কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে ডালি পদ্ধতিতে চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামীতে শুধু টুঙ্গিপাড়া নয় জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ হবে। গোপালগঞ্জে সাড়া ফেলেছে ডালি পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন ভাসমান বেডে মসলাজাতীয় ফসল চাষ ও ডালি পদ্ধতির উদ্ভাবক ও প্রকল্প পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক লাগে না। ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদনের পর কচুরিপানা পচা মাটিতে দিয়ে সবজি লাগানোর ফলে অর্গানিক সার পাওয়া যায়। আর এই কচুরিপানা পচা ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কৃষক লাভবান হবেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি মো. শহীদউল্লা খন্দকার বলেন, এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না, প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর তিনি কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার জলাবদ্ধ ও পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেন। চিচিঙ্গার মৌসুমে চিচিঙ্গা হবে, লাউয়ের মৌসুমে লাউ হবে অন্য কিছু হবে না, এমন ধারণা বদলেছে। এ পদ্ধতিতে সব ধরনের সবজি ও ফলমূল সারা বছর পাওয়া যাবে। বর্ষাকালে আমাদের দেশের অধিকাংশ জমি পানিতে তলিয়ে থাকে। এই ডালি পদ্ধতিতে বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে থাকা জমিতে সবজি চাষ করা সম্ভব। নাটোরের চিনিডাঙ্গায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রথম এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin
কমেন্ট বক্স